গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা সরু পথ। পথের ধার ঘেঁষে অসংখ্য গোলাপের বাগান। যত দূর চোখ যায়, শুধু লাল গোলাপের সমারোহ। মাঝে মাঝে কিছু সাদা গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরার বাগানও চোখে পড়ে।
শ্যামপুর গ্রামের গোলাপচাষি গোপাল চন্দ্র বলেন, সারা বছরই গোলাপ চাষ হয়। এখানে মূলত মিরান্ডা প্রজাতির লাল গোলাপের চাষ হয়। অনেকেই গোলাপ বাগান দেখতে আসেন। যাঁরাই ঘুরতে আসেন, কিছু টাকার ফুল কিনে নিয়ে যান। ট্রলারে সাদুল্লাহপুর যেতে চাইলে গাবতলী মাজার রোড কিংবা মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর নেমে রিকশায় দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট যেতে হবে। ঘাট থেকে ৩০ মিনিট পরপর সাদুল্লাহপুরের উদ্দেশে ট্রলার ছাড়ে। জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। হেঁটেই সাদুল্লাহপুর ও এর আশপাশের গ্রাম ঘোরা যায়।
দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট থেকে ট্রলারে সাদুল্লাহপুর ঘাটে যাওয়ার সময়টুকু মুগ্ধ হওয়ার মতো। নদীর দুই তীরের মনোরম দৃশ্য চোখে প্রশান্তি দেয়। ট্রলারে প্রায় আধা ঘণ্টা লাগে সাদুল্লাহপুর যেতে। আর ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে মিরপুর বেড়িবাঁধ ধরে বিরুলিয়া সেতু হয়ে সোজা গেলে আকরান বাজার। বাজার থেকে বাঁয়ের পথ ধরে এগোলেই দেখা মিলবে গোলাপ রাজ্যের।
কাফরুল এলাকা থেকে বেড়াতে এসেছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পারভেজ খন্দকার। তিনি বলেন, ‘সময় পেলেই এখানে ঘুরতে চলে আসি। ঢাকার এত কাছে এত সুন্দর গ্রাম ভালোই লাগে। ঘাটে নেমে হেঁটে হেঁটে কয়েক গ্রাম ঘুরে দেখি।’ সাদুল্লাহপুর ও এর আশপাশের গ্রামে আছে তিনটি ফুলের হাট। বিকেলে ফুলচাষিরা ফুল কেটে নিয়ে চলে আসেন হাটে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা এসে ভিড় জমান। রাতে জমে বেচাকেনা। ভোর হওয়ার আগেই গোলাপ গ্রামের ফুল পৌঁছে যায় রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা ফুল বিক্রির দোকানে।
সাদুল্লাহপুর ঘাটে বেশ কিছু দোকানপাট আছে। দুটি খাবার হোটেল আছে মোটামুটি মানের। সেখানে ভাত, ভর্তা, সবজি, ছোট মাছ ইত্যাদি পাওয়া যায়। ঘাটের মিষ্টির দোকান দই, মিষ্টিসহ গরুর দুধের চা পাওয়া যায়। গ্রামে ঘোরা শেষে অনেকেই মুঠো ভরে তাজা গোলাপ কেনেন। গোলাপ গ্রামের কিছুটা সৌরভমাখা স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসেন কর্মব্যস্ত শহরে জীবনে। যাঁরা প্রকৃতির সান্নিধ্য ভালোবাসেন, যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে একটু সময় বের করে ঘুরে আসতে পারেন লাল গোলাপের গ্রামে।
0 comments:
Post a Comment