Saturday, March 11, 2017

উলিপুরের বুড়িতিস্তা !

By on 10:43:00 PM

নামটি সবার কাছে পরিচিত। বুড়িতিস্তা বলতে আমার গুনাইগাছ ব্রিজের নিচ দিয়ে প্রবাহিত মৃতপ্রায় নদীটিকেই বুঝি। যার উৎপত্তি তিস্তানদীর অববাহিকা থেকেই।
নদীটি তিস্তানদীর বজরা এলাকায় উৎপত্তি লাভ করে চিলমারী, ফকিরেরহাট, ধামশ্রেণী, খেয়ারপাড় হয়ে উলিপুর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। প্রতিটি শহর কিংবা নগরী উৎপত্তি কোন না কোন নদীর তীর ঘেষেই হয়।





উদাহারণস্বরূপ, ঢাকা শহর বুড়িগঙ্গার তীরে, বগুড়া শহর করোতোয়ার তীরে, রংপুর শহর ঘাঘট নদীর তীরে, তেমনি উলিপুর শহরটিও এই নদীটিকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে।
আমাদেরবুড়িতিস্তানামক নদীটির পরিণতিও কিন্তু করতোয়া কিংবা ঘাঘটের মতই হয়েছে। যে নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে গড়ে উঠল শহর, সে শহর সৃষ্ঠির পর আমরা ভুলে গেলাম শহরের জন্মদাতা নদীকেই। কাঁচকোল এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রক সুইচগেট, বাঁধের ফলে সভ্যতার কালগর্ভে হারিয়ে গেল একসময়ের প্রমত্তা, খরস্রোতাবুড়িতিস্তা তবুও প্রতিবছর বর্ষাকালে ব্রক্ষ্মপুত্রের পানিবৃদ্ধির সাথে সাথে নদীটি তার প্রাণ ফিরে পেত। কিন্তু উলিপুরের ভুমিদস্যুদের দখলদারিত্বে সে অস্তিত্বটুকুও আজ বিলীন প্রায়।
বিশেষ করে, গুনাইগাছ ব্রীজের দুইপাশে নদীদখল করে গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্থাপনা, মার্কেট, অফিস সিএনজি স্ট্যান্ড। প্রচলিত আইন অনুযায়ী নদী দখল অপরাধ হলেও প্রশাসনকেমধ্যমা আঙ্গুলীদেখিয়ে সীমানা ঠেলতে ঠেলতে আজ পুরা নদীটিকেই গ্রাস করতে বসেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
শেষ মুহুর্তে এসেও যদি তাদের আটকানো না যায়, তবে ফল কি হবে আসুন একটু অনুমান করি,
প্রথমত, উলিপুর উপজেলার জেলে সম্প্রদায় এবং কৃষি কাজের অনেকাংশে এই নদীর উপর নির্ভশীল। তাদের জীবিকায় বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে যে দেশীয় মাছগুলোর পাওয়া যায় সেগুলোর যোগান শূণ্যের কোঠায় নেমে আসবে। চৈত্র মাসে কৃষি জমিতে পানি পাওয়া যাবে না।
দ্বিতীয়ত, সব থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে গুনাইগাছ পাইলট স্কুল, গুনাইগাছ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুনাইগাছ পাইলট স্কুল জামে মসজিদ, মন্দির শ্মশান। ব্রীজ সংলগ্ন স্থাপনাগুলোতে স্রোত বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সরাসরি আঘাত হানবে উল্লেখিত স্থাপনাগুলোতে।  ফলে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে প্রতিষ্ঠানগুলো।
তৃতীয়ত মারাত্মক ক্ষতিকর দিকটি হল, উলিপুরের পৌরসভার ড্রেনেজ সিস্টেম পুরোপুরি নির্ভরশীল বুড়িতিস্তার উপর। দখল ঠোকানো না গেলে নিষ্কাশিত বর্জ্য বর্ষায় পানির সাথে মিশে প্লাবিত বাড়ি কিংবা সংলগ্ন প্রতিষ্ঠান সমুহে প্রবেশ করবে ফলে পানিবাহিত রোগের প্রকোপে বাড়বে মৃত্যু ঝুকি। বলে রাখা ভাল, স্থাপনায় বাধাপ্রাপ্ত পানি খুব সহজেই স্ফীত হয়ে সমতল প্লাবিত করবে। এভাবে যদি নদীটি হারিয়ে যায় তবে ইকোসিস্টেমে মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রভাব পড়বে। 
৪মার্চ ২০১৭ তারিখ রেল,নৌ-যোগাযোগ পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি, উলিপুর উপজেলা শাখার সভাপতি আপন আলমগীর তাঁর ফেসবুক ওয়ালে এব্যাপারে শেয়ার করে গনআন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।
তিনি অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই লিখেছেন, “আমাদের চোখ বন্ধ। আমরা কিছুই দেখিনা। দেখলেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে চলি। “ঝামেলা এড়াতে চাই আমরা,মাথা ঘামাতে চাই না।আমাদের চোখের সামনেই লুট হয়ে যাচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য। দখল হয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। হারিয়ে যাচ্ছে একটি নাম- ‘বুড়িতিস্তা
তবুও কি আমরা চুপ করে থাকবো.!?
আসুন….. বুড়িতিস্তা বাঁচাই, উলিপুর বাঁচাই

আগামী ১৩/০৩/২০১৭ রোজ সোমবার,সকাল ১১ ঘটিকায় বুড়িতিস্তার উপরেই মানববন্ধন। মানববন্ধনে সকল রাজনৈতিক,সামাজিক,সাংস্কৃতিক,স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে নিজস্ব ব্যানার সহ মানববন্ধনে উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষ ভাবে আহবান করা হলো।

0 comments:

Post a Comment

Popular News