Monday, September 5, 2016

তথ্য উদ্ধারের একজন কর্মী

By on 1:07:00 PM
বলা নেই কওয়া নেই, হুট করে একদিন দেখলেন, কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে সমস্যা দেখা দিয়েছে, আর কাজ করছে না। কিংবা কোনো কারণে হাত থেকে পড়ে নষ্ট হয়ে গেল। আর ভাবতে লাগলেন, আহা! সব ফাইল-ডকুমেন্টস বুঝি হারিয়ে গেল।


দরকারি ফাইল হারিয়ে গেলে বেশ বিপদেই পড়তে হয়। এ ধরনের সমস্যা, অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্ত বা নষ্ট হয়ে যাওয়া ডিজিটাল মেমোরি যন্ত্র বা হার্ডডিস্ক ড্রাইভ থেকে তথ্য পুনরুদ্ধারের সেবা দিচ্ছে মাহবুব হোসেনের প্রতিষ্ঠান ডেটা রিকভারি স্টেশন (ডিআরএস)। বছর দুয়েক ধরে এ সেবা দিচ্ছে দেশীয় এই প্রতিষ্ঠান। মাহবুব বলছিলেন, ‘মানুষের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণপত্র উদ্ধার করে দেওয়ার ইচ্ছা থেকে এ কাজ করছি।’ মাহবুবের শুরুটা আরও আগে। স্কুলজীবন পেরিয়ে মাত্র কলেজে পা রেখেছিলেন। ২০০১ সালের কথা। কম্পিউটারে কোনো সমস্যা হলে নিজে নিজেই সমাধান করার চেষ্টা করতেন। পাশাপাশি অন্যদের সমস্যাও সমাধান করে দিতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এ তরুণ। পড়াশোনার পাশাপাশি এই ছিল মাহবুব হোসেনের প্রতিদিনের কাজ। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করামাত্রই ২০০৩ সালে যুক্ত হন ইন্টারনেটে। মানে ইন্টারনেটের সংযোগ নেন। এরপর শেখার চেষ্টাটা আরও বাড়িয়ে দেন। কিন্তু এরপর মুখোমুখি হন এমন এক সমস্যার, যেটি তাঁকে এ পেশায় আনতে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে জানান তিনি। ৩১ আগস্ট প্রথম আলো কার্যালয়ে যখন এই তরুণের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন ঘটনার কালটা ঠিকমতো বলতে না পারলেও জানিয়েছেন, ২০০৪ বা ২০০৫-এর দিকে হবে। তাঁর বাবার কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে গেলে দুশ্চিন্তায় পড়েন পরিবারের সবাই। বাবা স্থানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিক। কোনোভাবেই তথ্য-উপাত্ত পুনরুদ্ধার করতে পারলেন না তাঁরা। আর তখনই এ নিয়ে মাহবুবের কাজ শুরু। সে সময় ইন্টারনেট থেকে সংশ্লিষ্ট কারগরি লেখা পড়তে পড়তে তিনি একপর্যায়ে ডেটা রিকভারি বিশেষজ্ঞদের একটি বৈশ্বিক অনলাইন গ্রুপের সন্ধান পান, যা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন মাহবুব। তারপর ২০০৬ সালে স্যালভেশন ডেটা ম্যাক্সটর ফ্রেমওয়্যার রিপেয়ার নামক সফটওয়্যারের ডস সংস্করণের গ্রাহক হন। পরের বছর গ্রাহক হন উইন্ডোজ সংস্করণের। সে থেকেই মুক্ত পেশাজীবী (ফ্রিল্যান্সার) হিসেবে মাহবুব কাজ শুরু করেন ডেটা পুনরুদ্ধারের। পাশাপাশি চালিয়ে যান নিজের পড়াশোনা। রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে ২০১২ সালে চাকরি নেন দেশের একটি বেসরকারি বিমান সংস্থায়। খুব বেশি দিন থিতু হতে পারেননি সেখানে। গ্রাহকদের কাজের অনুরোধে চাকরি ছেড়ে এবার প্রতিষ্ঠা করেন ডেটা রিকভারি স্টেশন—ডিআরএস । আর রাজধানীতেই সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার বিদেশ থেকে এনে ২০১৪ সালে গড়ে তুলেছেন গবেষণাগার। তারপর ২০১৫ সালে চীনভিত্তিক ডেটা রিকভারি প্রযুক্তি প্রস্তুতকারক ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ‘ডলফিন ডেটা ল্যাব’ থেকে মাহবুব পান ‘সার্টিফিকেট অব এক্সিলেন্স’। বর্তমানে দেশের একাধিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদেশে ডেটা পুনরুদ্ধার করতে ব্যয় হয় অনেক টাকা। আর ডিআরএসে সেবা নিতে হার্ডডিস্কের ক্ষতির ওপর নির্ভর করে খরচ পড়বে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। সাধারণত হার্ডডিস্কের ক্ষতির ধরনের ওপর নির্ভর করে ৮৫-৯৫ শতাংশ পর্যন্ত ডেটা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়। ভবিষ্যতে দেশে একটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটও প্রতিষ্ঠা করতে চান মাহবুব, যেখানে তরুণেরা এ সম্পর্কে শেখার সুযোগ পাবেন।

0 comments:

Post a Comment

Popular News