রাজধানীর উত্তরের বেশ কয়েকটি এলাকাকে নৌ যোগাযোগের মধ্যে আনতে এবার হাতিরঝিলে নামানো হচ্ছে ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’।
হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্পের অধীনে এ ট্যাক্সিগুলো
এফডিসি থেকে বাড্ডা লিংক রোড ও রামপুরা ব্রিজের মধ্যে যাতায়াত করবে। ভাড়া
হবে যথাক্রমে ২৫ ও ৩০ টাকা। পরবর্তীতে এ সুবিধা গুলশান ও বারিধারায়ও
সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
আগামী মাসের শেষদিকে এ ‘ট্যাক্সি সার্ভিস’ শুরু হতে
পারে বলে জানিয়েছেন হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর কাজী
শাকিল হোসেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রামের একটি কারখানায় ৬টি ওয়াটার ট্যাক্সির
কাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি চীন থেকে ইঞ্জিন আসার কথা রয়েছে। এরপর শেষ সপ্তাহে এটি উদ্বোধন হতে পারে।
“বডি তৈরির কাজ শেষ। ইঞ্জিন এলেই ট্যাক্সিগুলো হাতিরঝিলে
নামবে। গৃহায়ণ
ও গণপূর্তমন্ত্রী এই ওয়াটার ট্যাক্সিগুলোর চলাচল উদ্বোধন করতে পারেন।”
প্রাথমিকভাবে
৬টা ওয়াটার ট্যাক্সি গণপরিবহন হিসেবে চলাচল শুরু করবে; প্রতিটি ট্যাক্সি
তৈরিতে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান তিনি।
শাকিল বলেন,
ট্যাক্সির প্রতিটিতে ৪৫ জন যাত্রী উঠতে পারবে; থাকবে একটি করে ছোট
ক্যান্টিন যেখানে কেক, বিস্কুট ও হালকা খাবার পাওয়া যাবে।
“এফডিসি মোড়ের টার্মিনাল থেকে রামপুরা ব্রিজ
এবং বাড্ডা লিংক রোড পর্যন্ত দুটি রুটে তিনটি করে ওয়াটার ট্যাক্সি চলবে। রামপুরা
পর্যন্ত ২৫ আর বাড্ডা পর্যন্ত ৩০ টাকা করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।”
তিন মাস পর এ ভাড়া সমন্বয় করা হতে পারে বলেও জানান এ সেনা কর্মকর্তা।
“আনুমানিক ভাড়া হিসেব করে আমরা শুরু করছি। তিন মাস পর এটা ইভেলুয়েট করা
হবে। ইভেলুয়েশনের পরে আমরা যদি দেখি ৫-১০ টাকা কমানো যাবে, তাহলে
‘ডেফিনেটলি’ আমরা তা কমাব।”
মেসার্স ওয়াহিদ মিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান ২০ বছর এই ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস পরিচালনা করবে।
“আমরা
যে ভাড়া ঠিক করে দেব, ঠিকাদার সে অনুযায়ী আদায় করতে বাধ্য। তাদের সঙ্গে
সেভাবেই চুক্তি করা আছে। তারা চাইলেই ভাড়া বাড়াতে পারবে না। ভাড়া বাড়ালে
তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করব।”
দুরত্বের তুলনায় ভাড়ার এ অংক বেশি কি না-
এ প্রশ্নের জবাবে শাকিল বলেন, প্রকল্পটিতে বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি;
এছাড়া ভালো সেবা
নিশ্চিতের দিকটিও খেয়াল রাখতে হচ্ছে।
“এখানে সরকার কোনো ভর্তুকি দেবে
না। উল্টো হাতিরঝিল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে নেবে।
লাভ ছাড়া তো কেউ কাজ করবে না। আবার জনগণের সুবিধাটাও আমাদের দেখতে হবে।
সবকিছু হিসাব করার পরে আমাদের কমিটি ডিসাইড করবে ভাড়া কত হতে পারে।”
হাতিরঝিলের এফডিসি অংশে এ ট্যাক্সিগুলোর টার্মিনাল থাকবে। সেখান থেকে ছাড়ার আধাঘণ্টার মধ্যেই
ট্যাক্সিগুলো গন্তব্যে পৌঁছে যাবে বলে জানান এ প্রকল্প কর্মকর্তা।
“এখানে অতিরিক্ত গতিসম্পন্ন নৌযান চলার সুযোগ নেই। বেশি জোরে চললে ঢেউয়ের
কারণে পাড় ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য এসব নৌযানগুলো ধীরগতিতে
চলবে।”
ওয়াটার ট্যাক্সি চালু হলে রাজধানীর একটি বড় অংশের লোকজনের
যাতায়াত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন হাতিরঝিলের
কর্মকর্তারা।
“বাড্ডা,
গুলশান, রামপুরা, খিলগাঁওসহ
নগরীর পূর্বাংশের মানুষ কারওয়ান বাজার, মগবাজার, দিলু রোড, ইস্কাটন, বাংলামোটর,
তেজগাঁও এলাকায় সহজে যাতায়াত করতে পারবে,” বলেন হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক জামাল আক্তার।
“গুলশান ও বাড্ডা থেকে এসব এলাকায় আসতে
অনেক সময় লাগে। যানজট
আছে, বড় বড় সিগন্যালেও পড়তে হয়; ওয়াটার ট্যাক্সিতে সরাসরি চলে আসবে।”
“যাতায়াতের পাশাপাশি নগরবাসী নৌভ্রমনের
আনন্দও নিতে পারবেন এ সেবা থেকে,” মন্তব্য তার।
নগরবাসীর ‘সাড়া
পেলে’ এ ট্যাক্সি সার্ভিস
পরে গুলশান লেক হয়ে বারিধারায় সম্প্রসারিত করা হবে; পাশাপাশি
হাতিরঝিলে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের প্যাডেল বোট
ও বিলাসবহুল ইয়ট নামানোরও চিন্তা আছে বলে জানান এ প্রকল্প পরিচালক।
0 comments:
Post a Comment